শহাদুজ্জামান বলেন, আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ মনে করেছে, করোনার বিধিনিষেধ মানবাধিকার লঙ্ঘন; ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
Published : 11 Dec 2022, 11:14 PM
করোনাভাইরাস মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে অধিক মৃত্যুহারের ব্যাখ্য দিয়েছেন লেখক গবেষক শাহাদুজ্জামান।
রোববার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে তিনি বলেন, চায়না, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া – এ রকম একনায়কতান্ত্রিক দেশগুলো করোনা মহামারী রোধে বেশ সফল হয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। এর কারণ কী?
যুক্তরাজ্যের ব্রাইটন অ্যান্ড সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শাহাদুজ্জামান বলেন, আমেরিকার অধিকাংশ মানুষই করোনা ও আরোপিত বিধিনিষেধ মানেনি। কারণ তাদের মূলনীতিটা ছিল – তারা মনে করেছে, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
“আমেরিকার লোকেরা ওই সময় বলত – ‘আমি মাস্ক পরব কি পরব না এটা আমার সিদ্ধান্ত।’ করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে তারা সেখানে প্রতিবাদ করেছে; মিছিল করেছে – ‘আমি লকডাউনে থাকব না, মাস্ক পরবো না।’”
অধ্যাপক শাহাদুজ্জামানের ভাষ্য, এ প্রতিবাদের মূলে তাদের যুক্তি ছিল ব্যক্তিগত ইচ্ছা, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার।
তাদের এই সামষ্টিকতার অভাবেই মৃত্যুহার বেড়েছে উল্লেখ করে শাহাদুজ্জামান বলেন, এখন এটা নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে। যখন একটা মহাবিপদ ঘটে; যখন পুরো গ্রহ একটি সংকটের ভিতরে পড়ে, তখন ব্যক্তিগত পছন্দ, ইচ্ছা, স্বাধীনতা, ধর্মীয় অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ নাকি সামষ্টিক অধিকার ও দাবি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা জরুরি।
“এটা বহু তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে; সেটার একটি বড় কারণ হচ্ছে এই সামষ্টিকতা, সামষ্টিক অধিকার। কারণ এখানে একটি সামষ্টিকতা কাজ করেছে।”
রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘নৃবিজ্ঞানের চোখে করোনা অতিমারির ভিতর বাহির’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি কোভিড-১৯ এর সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান গত কয়েক শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বড় বড় মহামারীর ইতিহাসও তুলে ধরেন। এছাড়া এই মহামারীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বটা বিশেষভাবে তুলে ধরেন তিনি।
তার মতে, করোনা মহামারী একটি সামাজিক অভিজ্ঞতা। পুরো সমাজ এই অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গেছে। যখনই কোনো অভিজ্ঞতা সামাজিক অভিজ্ঞতা হয়, তখনই সেখানে উপস্থিত হতে হয় সমাজবিজ্ঞানীদের। তখন একজন নৃবিজ্ঞানীরও অবদান রাখতে হয় সেখানে। সমাজে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
সামাজবিজ্ঞানীদের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞানীরা তো ভাইরাস নিয়ে কিছু করতে পারবে না। সেটা বায়োমেডিকেল বা ভাইরোলজিস্টরা নিধনের বা প্রতিরোধের ওষুধ, টিকা তৈরির চেষ্টা করবেন।
“কিন্তু আমি একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে, এই বিষয়টি আমি সামাজিক আঙ্গিকে বুঝতে পারছি কি না। সমাজ কীভাবে এটাকে মোকাবিলা করছে। সমাজের উপর এটার কী প্রভাব পড়ছে, এটা থেকে আমি কী শিখতে পারছি। জীবন দিয়ে, ব্যক্তি দিয়ে সমাজ দিয়ে এই অসুখটা আমাকে কী জ্ঞান দিচ্ছে। এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করাই সমাজিবিজ্ঞানীদের কাজ।”
সেই বিষগুলো প্রতিফলিত ও গবেষণা করা একজন সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞনীর কাজ বলে তিনি মনে করেন।
কোভিডকে নানা দেশের নিজেদের মতো করে মোকাবেলা করার বিষয়েও তিনি কথা বলেন। বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন করোনা শনাক্ত হয়েছে তখন যে লকডাউনটা দেওয়া হয়েছিল সেটা ছিল ‘ছুটির’ আকারে। ছুটি বলার কারণে মানুষের মনে তেমন কোনো প্রভাব এটা ফেলতে পারেনি।
“মানুষ তেমন সচেতন হয়নি। সেটার কারণে কোভিডে আক্রান্ত বেড়েছে। এছাড়া মানুষ যখন কোনো কিছু পরিষ্কার করে বুঝতে পারে না, তখন আতঙ্কটা বেড়ে যায়।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে এই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আ ফ ম জাকারিয়ার সভাপতিত্বে ও সহকারী অধ্যাপক জাভেদ কায়ছার ইবনে রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক একেএম মাজহারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।